۳ آذر ۱۴۰۳ |۲۱ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 23, 2024
ডক্টর, শিক্ষক বা প্রশিক্ষক
ডক্টর, শিক্ষক বা প্রশিক্ষক

হাওজা / ইংরেজি ‘ডক্টর’ শব্দটি মূলত ল্যাটিন ভাষার। এর অর্থ হলো ‘শিক্ষক’ বা ‘প্রশিক্ষক।

লেখা: মহিউদ্দিন মোহাম্মদ

পর্ব ৩- বহু পিএইচডিপ্রত্যাশী এখন থিসিসের বাঁধাই ও মলাট দিয়ে এর বিষয়বস্তু ঢেকে রাখতে চান। তারা জানেন যে, এটির ভেতরে কিছু নেই, এটি কিছু শূন্যের সমাহার। এর পাতায় পাতায় ফুটনোট। এর পাদটীকা, অর্থাৎ পায়ে টীকা আছে, কিন্তু কপালে কোনো টীকা নেই। এটি কোনো জ্ঞান উৎপাদন করে নি, এটি পড়লে মনে কোনো আলোর বিচ্ছুরণ ঘটবে না। এটি সবজি ক্ষেতে গজানো বিরক্তিকর ঘাস; যা মাঝে মাঝে ছাগল এসে খেয়ে যায়।

তাই এটিকে ঢেকে রাখতে হবে সুন্দর মলাট দিয়ে, বাঁধাই করতে হবে উৎকৃষ্ট কারিগর দিয়ে। মানের যখন অবনমন ঘটে, সৌন্দর্য তখন মুখ্য হয়ে ওঠে। মানহীনতা ঢাকতে পিএইচডি শ্রমিকেরা আশ্রয় নিচ্ছেন ভালো মানের কাগজ, ভালো মানের প্রিন্ট, ও ভালো মানের মলাটের। এ পরিশ্রমটুকুর জন্যই তাদের পিএইচডি দেয়া হচ্ছে।

এটি যে মুদ্রিত আবর্জনা, এটি যে কেরোসিনের সলতে, তা ওই পিএইচডিপ্রত্যাশী ও তার সুপারভাইজর জানেন। তারপরও এটিকে তারা প্রকাশ করেন। এটিই তাদের জীবিকা। সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ময়লা সাফ করে জীবিকা নির্বাহ করেন, আর এই পিএইচডি শিল্পীরা ময়লা উৎপাদন করে রুটির সংস্থান করেন। সম্প্রতি আফ্রিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বয়স ও ক্ষমতায় তার চেয়েও বড় এক বুড়ো ছাত্রকে পিএইচডি দান করে রুটি হাতিয়ে নিয়েছেন। ছাত্রটিও খুশি। কারণ, তার কোনো কিছুর অভাব ছিলো না; শুধু নামের আগে একটি ড-এ ডট সে লাগাতে পারছিলো না। তার এ অভাব ঘুচে গেছে।

চুরির অপবাদ একসময় দখলে ছিলো গ্রামের সিঁধেল চোরদের; কিন্তু চোরদের অতীত গৌরব এখন ডক্টরেটদের দখলে। সম্প্রতি একটি বিশ্ববিদ্যালয় এমন দুই চোরকে গৌরবজনক শাস্তি প্রদান করেছে। তারা চুরি করেছিলো এক বিখ্যাত মনীষীর লেখা। অভিনয় করতে করতে তাদের এমন উন্নতি হয়েছে যে, তারা এখন ফুকো, রাসেল, রুশো, বার্কলে, বার্গসন, হেগেল, কান্ট, হিউম, হবস, ও সাঁত্রের চরিত্রে অভিনয় করছে। এ প্রতিভা নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয়।

কিন্তু শাস্তি যাদের প্রাপ্য ছিলো, তারা না পেয়ে পেলো আহাম্মকেরা। আহাম্মক দিয়ে যে গবেষণা হয় না, তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বুঝতে রাজি নয়, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও পরিচালিত হচ্ছে অভিজ্ঞ আহাম্মক দ্বারা। এক পাল আহাম্মক দেখাশোনা করছে আরেক পাল আহাম্মকের, এ এক ট্র্যাজেডি।

বুলবুল কবির নামের একজনকে মনে পড়ছে, তিনি ভোলাগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ বিভাগের শিক্ষক। ২০১৫ সালে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি পান, কারণ খুব শ্রমসাধ্য একটি পিএইচডি থিসিস তিনি লিখেছিলেন (কোনো কাজের ৯৮ শতাংশ নকল করা সত্যিই শ্রমসাধ্য ব্যাপার)।

মুশকিল হলো, থিসিসটি একদিন সুইডেনের গোটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাস নিলসনের নজরে আসে। নিলসন দেখতে পান, বুলবুল কবির নামের খাটি বাঙালি শিল্পীটি তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রায় হুবহু মেরে দিয়েছেন, এবং ভাগিয়ে নিয়েছেন পিএইচডি! ক্ষুব্ধ নিলসন ভোলাগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জনাব সোবহানাল্লাহকে চিঠি লিখে এর বিচার চান। বিচারক হিশেবে উপাচার্য সোবহানাল্লাহর সুখ্যাতি কে না জানে?

বুলবুল কবিরকে চাঁদের আলো নামক একটি পত্রিকা জিগ্যেস করেছিলো, কেন আপনি এমনটি করলেন? বুলবুল কবির জবাব দিয়েছিলেন, কোনো গণ্ডগোল হয়ে থাকলে তার দায়ভার আমার সুপারভাইজর ও ভোলাগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের; এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। পরে একদিন চাঁদের আলো ভোলাগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে যায়, এবং বুলবুল কবিরের থিসিসটিকে খুঁজে বের করে। তারা দেখতে পায়, কে বা কারা যেন বুলবুল কবিরের শিল্পকর্মটিতে বেশ ঘষামাজা ও সংযোজন-বিয়োজন করেছে! গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক মো. জয়নব আলির বক্তব্য ছিলো এরকম: “অতি সম্প্রতি ফাইজুল মোহাম্মদ বুলবুল কবীরের পিএইচডি অভিসন্দর্ভে কিছু ঘষামাজা আমাদের নজরে এসেছে। চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ ওঠায় কেউ অবৈধ প্রক্রিয়ায় এই কাজটি করেছেন। ঘটনার তদন্ত প্রয়োজন।”

বুলবুল কবিরের সুপারভাইজর ছিলেন অধ্যাপক বদিউস সামাদ আবু। আবু সাহেব কি তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেছিলেন? তিনি কি সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর বুলবুল কবিরকে জানিয়েছিলেন কাকে বলে গবেষণা? সম্ভবত না। গবেষণা তাদের মুখ্য বিষয়বস্তু ছিলো বলে মনে হয় না। তাদের লক্ষ্য ছিলো— কীভাবে কয়েক হাজার শব্দ এক করে কিছু বাক্য লেখা যায়, এবং তা ছাপিয়ে ভাগিয়ে নেয়া যায় পিএইচডি। বুলবুল কবির এ কাজে দারুণ সফলতা দেখিয়েছেন, এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণাকর্মে কতোটা ব্যর্থ, তাও দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। বুলবুল কবিরকে আমি অভিনন্দন জানাই।…চলবে…

تبصرہ ارسال

You are replying to: .